শেরপুরে আ.লীগ নেতা অভি হত্যা মামলায় ৫জন গ্রেপ্তার

শেরপুর ডেস্কঃ বগুড়ার শেরপুরে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মর্তুজা কাওসার অভি (৩৮) খুনের ঘটনার মামলায় অভিযুক্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সর্বশেষ শুক্রবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া চর থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন শহরের নয়াপাড়া এলাকার জিল্লুর রহমান মাস্টারের ছেলে আরিফুর রহমান শুভ (৩৫) ও শেরপুর উপজেলার শেরুয়া গ্রামের পাকছার আলীর ছেলে রিয়াজুল ইসলাম বাপ্পি (৩৭)।

বিকেলে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান খোন্দকার এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, জেলার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহযোগিতা নিয়ে মামলার এজাহার নামীয় অভিযুক্ত শুভ ও বাপ্পিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এনিয়ে এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার নামীয় আটজনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, আওয়ামীলীগ নেতা অভির সঙ্গে ঠিকাদারি ও হাটের ইজারা ব্যবসা নিয়ে মামলার অভিযুক্তদের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। একপর্যায়ে বিগত ২৮ সেপ্টেম্বর বুধবার সাড়ে চারটার দিকে অভি প্রাইভেটকার মেরামতের জন্য উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন মোজাহিদ মোটর গ্যারেজে যান। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ হিমেল অভিকে ডেকে গ্যারেজের দক্ষিণপাশের ফাঁকা বাগানের মধ্যে নিয়ে কথা বলছিল। এসময় শরীফ নামের যুবক সাধারণ লোকজনকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। এই সুযোগে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা মামলার অন্য অভিযুক্তরা এসে অভির সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। প্রাণ বাঁচাতে বাগানের ভিতর দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন অভি। পরে রাম-দা, চাপাতি ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে এলোপাথারী কুপিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এরপর আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (শজিমেক) নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অভিকে মৃত ঘোষণা করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে নিহত আওয়ামীলীগ নেতা অভির স্ত্রী খাদিজা আক্তার লিমা বাদি হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন। দায়ের করা মামলায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, শহরের নয়াপাড়া (কোর্টপাড়া) এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩২), উলিপুর পাড়া আলতাব হোসেনের ছেলে এনামুল মুসলিমিন সোহাগ (৩৫), উপজেলার শেরুয়া গ্রামের পাকছার আলীর ছেলে রিয়াজুল ইসলাম বাপ্পি (৩৭), বারদুয়ারীপাড়ার শফিকুল ইসলাম রাঞ্জুর ছেলে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ হিমেল (৩২),শহরের নয়াপাড়া এলাকার জিল্লুর রহমানের ছেলে আরিফুর রহমান শুভ (৩৫), নয়াপাড়া এলাকার দারার ছেলে জাহিদ খান রকি (২৭), শহরের নয়াপাড়া এলাকার আয়নাল হোসেনের ছেলে জাহিদ হোসেন (২৬) এবং পূর্বদত্তপাড়া এলাকার গোলাম মোস্তফা ড্রাইভারের ছেলে সোহাগ হোসেন (৩০) ও । এছাড়া আরও ৮-৯জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। এরমধ্যে ইতোমধ্যে হিমেল, সোহাগ ও জাহিদকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

নিহত শেখ মর্তুজা কাওসার অভি শেরপুর পৌর শহরের বারোদুয়ারী খন্দকার পাড়া এলাকার মৃত হোসাইন কাওসার ফুয়াদের ছেলে। তিনি পৌর আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এদিকে ময়না তদন্ত শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিহত ওই আওয়ামীলীগ নেতার লাশ শহরের বারোদুয়ারী খন্দকারপাড়াস্ত নিজ বাসায় আনা হলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরে ওই রাতেই শেরপুর শহীদিয়া আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে তার নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে অভিকে দাফন করা হয়।

মামলার বাদি খাদিজা আক্তার লিমা অভিযোগ করে জানান, ‘আমার স্বামীর হত্যাকারীরা খুবই প্রভাবশালী। ঘটনার পর থেকেই তাদের নামে মামলা না করার জন্য নানাভাবে আমাকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছিল। কিন্তু আমি সেসব বাধা উপেক্ষা করে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন পালনের কথা বলে আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে’ দাবি করে তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীর খুনিরা যতবড়ই প্রভাবশালী হউক না কেন আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি। তবে ন্যায় বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট সহযোগিতার জন্য আকুল আবেদন করেন তিনি।

জানতে চাইলে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান খোন্দকার বলেন, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে রয়েছে। তাই কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তি এই মামলায় হয়রানির শিকার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেবল সরাসরি এই হত্যাকান্ডে জড়িত ও পরিকল্পনাকারী তাদেরকেই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে দাবি করে পুলিশের এই কর্মকর্তা।