সাকিল মাহমুদ: নওগাঁ সাপাহারের ভারত সীমান্ত ঘেঁষে জবই বিল, উত্তরাঞ্চলের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এই বিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই বিলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক আসে। যার ব্যতিক্রম ঘটেনি এবারের ঈদুল ফিতরেও। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে জবই বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে হাজার হাজার দর্শনার্থী। মুগ্ধ হন বিলের আভ্যান্তরিন ও বাহ্যিক কারুকাজে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঈদের ৭ম দিনেও জবই বিলে দর্শনার্থীদের ভীড়ের কোন ঘাটতি ছিলো না। মুগ্ধতা প্রকাশ করেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত দর্শনার্থীরা। সব বয়সী দর্শনার্থীদের আগমনে মুখরিত ছিলো এই জবই বিল প্রাঙ্গন। আগতরা মেতে উঠেছেন নিজেকে নতুন ভাবে উপভোগ মধ্যে দিয়ে। বাহারী পোশাকে নিজের স্মৃতিটুকু ধরে রাখতে সেলফোনে ও ক্যামেরায় মন ভরে তুলছে ছবি। কেউ এসেছেন পরিবারসহ কেউ বা বন্ধু-বান্ধব এক সাথে, শুধু ঈদেই এমন দৃশ্য দেখা যায় তা নয়। বরং বিভিন্ন ছুটি বা বিশেষ দিনের উপচে পড়া ভীড় জমে থাকে এই জবই বিলে। সম্প্রতি পাখি, মাছসহ নানাবিধ উদ্ভিদের আবাসস্থল গড়ে উঠেছে এই বিলে। এবং সক্রিয় ভাবে সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার ফলে দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে বিলটি শুধু তাই নয় বর্তমান সময়ে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অক্লান্ত পরিশ্রমে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে চলেছে আজকের এই জবই বিল।
বর্ষাকালে পানিতে ফুলে-ফেঁপে যৌবন ফিরে পায় এই বিল, বিশালাকার জলরাশিতে নৌকা,স্পিডবোর চলাচলে নবরূপে প্রাণ ফিরে পায় চারিদিকে। বর্তমান সময়ে অথৈ জলরাশি না থাকলেও মাঠ ভরা সোনালী ফসলে যেন প্রকৃতির রূপ ফুটে উঠেছে তেমনি অপরূপ ভাবে। মুক্ত হাওয়ায় শীতল হয়ে যায় প্রাণ। পাশাপাশি এবারের মূল আকর্ষণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু নান্দনিক স্থাপনা। বিলের উপর নির্মিত ব্রিজের প্রবেশ পথেই চোখে পড়ে নান্দনিক সেল্ফি পয়েন্ট। একটু এগিয়ে যেতেই বাম পাশে আপনার দৃষ্টি কাড়বে নান্দনিক ভাস্কর্য “মাছ চত্বর”। যা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যেগে তৈরি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সড়কের দু’পাশে চোখে পড়বে লাল, সাদা ও হলুদ রঙের থরে থরে সাজানো পিলার। রাস্তার দুই পাশে দৃষ্টিনন্দন বসার ১২টি বেঞ্চ রয়েছে, সড়ক পেরিয়ে পশ্চিম পাশে গেলে চোখে পড়ে “বিল বিলাস” নামক দুটি ভিউ পয়েন্ট। যা পর্যটকদের মন কাড়ে। এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিল এলাকায় বসানো হয়েছে বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র।
নওগাঁ সদর থেকে বিলে ঘুরতে আসা পর্যটক আব্দুল আহাদ সাথে কথা হলে তিনি বলেন,“ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পরিবারসহ বিল দেখতে এসেছি, গত বছরেও এই বিলে এসেছি। প্রতি ঈদেই জবই বিলে আমি আসি। কিন্তু অন্যান্য বছর এই ধরণের মনোরম দৃশ্য চোখে পড়েনি, এবারে নতুন নতুন স্থাপনা দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন,“ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে দর্শনার্থীদের জন্য নানাবিধ স্থাপনা তৈরী করা হয়েছে। এছাড়াও মাছ সংরক্ষণের জন্য বেশ কয়েকটি অভয়াশ্রম তৈরী করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো উন্নয়নমূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। যাতে করে জবই বিল সারাদেশে সুনাম কুড়াতে পারে”। জবই বিলে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় নের্তৃবৃন্দের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ধারাবাহিগতা থাকলে এই বিলটি হতে পারে
উত্তরাঞ্চলের নামকরা পর্যটনকেন্দ্র এমনটাই ধারণা সচেতন মহলের।