সিটিতে স্বচ্ছ ভোটে জয় চায় নৌকা

শেরপুর নিউজ ডেস্কঃ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলন আর সংবিধান মেনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অনড় অবস্থানের মধ্যেই দেশে সিটি নির্বাচনের হাওয়া। ইতোমধ্যেই পাঁচ সিটিতে আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন নৌকার প্রার্থীরা। তবে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তের কারণে এ নির্বাচনে দলগতভাবে অংশ নিতে পারছে না বিএনপি।

অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনের ‘উকিল সাত্তার’ মডেলে যদি কেউ প্রার্থী হয়ে যায়, তাও বিএনপিকে ভিন্ন পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে। ফলে নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়া নিয়ে বেকায়দায় আছে দলটি। ক্ষমতাসীনদের মতে, এই নির্বাচনেও ঘোমটাপরা প্রার্থী দেবে বিএনপি। এছাড়া জাতীয় পার্টি (জাপা) ও ইসলামী আন্দোলনসহ আরো কটি দল নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় রয়েছে। সব মিলিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে বড় এই নির্বাচনকে জনমত যাচাই হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দলটি। অন্যদিকে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নজরদারির মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনের মহড়া হিসেবে দেখা হচ্ছে সিটি নির্বাচনকে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য এটি এসিড টেস্ট হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপির আগ্রহী প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রতীকে দাঁড়ানোর চেষ্টা-তদবির করছেন। এর আগে নারায়ণগঞ্জের মেয়র পদে বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। এবারো বিএনপির কেউ যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন এবং দল থেকে বহিষ্কৃতও হন, তাতে দলীয় শৃঙ্খলা থাকবে; আবার সময়মতো দলের লোককে দলে ফেরানোও যাবে। এই কৌশলে বিএনপি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ না নিয়েও অংশ নিতে পারে। এতে দেশের বড় নগরীগুলোতে দলটির নেতাকর্মীর সক্রিয়তা ও গণসংযোগ এগোবে। আর দলীয়ভাবে না গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে যদি বিএনপির নেতারা দাঁড়িয়ে যান, তাহলে ক্ষমতাসীনরা প্রচার করবে, বিএনপির মধ্যে শৃঙ্খলা নেই; তারা কীভাবে দেশ চালাবে? এর উত্তরে বিএনপি হয়তো বহিষ্কারের কার্ড খেলবে। কিন্তু কার্যত লাভের পাল্লা ভারী ক্ষমতাসীনদেরই।

গাজীপুরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এবং তার মা উভয়েই প্রার্থী হয়েছেন। শুধু স্বতন্ত্র, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী দলের প্রার্থীই থাকবে না; বিদ্রোহী নেতার মতো শক্ত প্রতিপক্ষও থাকবে। খুলনা-রাজশাহীতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল না থাকায় বেশ ফুরফুরে রয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। সিলেটেও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী এবং শক্তিশালী কোনো প্রতিদ্ব›দ্বী না থাকায় নৌকার জোয়ার অনেক বেশি। তবে গাজীপুরের মতো একই ঘটনা ঘটতে পারে বরিশালেও। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সেখানে বিএনপির ঘোমটাপরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। যদিও সিটি নির্বাচনের মতো বড় খেলায় এসব ছোটখাটো কৌশলকে বড় করে দেখছে না আওয়ামী লীগ। তাদের মতে, প্রতিটি সিটিতেই শক্তিশালী প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যারা অন্য প্রার্থীর চেয়ে দক্ষ, যোগ্য এবং পরিশ্রমী নেতা। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ভোরের কাগজকে বলেন, ত্যাগী, পরীক্ষিত, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রত্যেকেই অত্যন্ত ক্লিন ইমেজের। এছাড়া টানা তিন মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশে উন্নয়নের জোয়ার অব্যাহত রয়েছে। মানুষ উন্নয়ন চায়।

এদিকে অনেকের মতে, এবারের সিটি নির্বাচনে কারচুপির জোরালো অভিযোগ উঠলে বেকায়দায় পড়বে আওয়ামী লীগ। জাতীয় নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বিষয়ে বিএনপির অভিযোগ আরো পোক্ত হবে। আবার সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও তার ফল আওয়ামী লীগের জন্য সুখকর নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রেও বিএনপি বলতে পারবে, এজন্য জাতীয় নির্বাচনও সুষ্ঠুভাবে হওয়া দরকার।

জানতে চাইলে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, এই নির্বাচনকে আমরা পরীক্ষামূলক নির্বাচন হিসেবে নিয়েছি। আমাদের জন্য জনমত জরিপ। টানা ১৪ বছরের উন্নয়নের ফসল ঘরে তুলতে চাই। নির্বাচনে বিএনপি হিজাব পরে আছে। গাজীপুরে হিজাব পরে নেমেছে। আরো নামবে। এদের নিয়ে আমরা ভাবছি না। বরং বিএনপিসহ যারা দিনরাত অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছে, তাদের উপযুক্ত জবাব দেবে এই সিটি করপোরেশন নির্বাচন। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচন ইসির জন্য এসিড টেস্ট। ইসি যে পক্ষপাতদুষ্ট নয়, সুষ্ঠু সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এটি প্রমাণ করার দায়িত্ব তাদের।

এদিকে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ইসির জন্য টেস্ট কেস হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। পাঁচ সিটিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়ে ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারলে রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের মানুষের আস্থা অর্জনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলেও গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেটে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে থাকলেও গাজীপুর ও বরিশালে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না- এটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বিএনপি প্রার্থী না দিলেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না, তাও নয়। কাউন্সিলর পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। মেয়র অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কাউন্সিলর পদকেও অবহেলা করা যাবে না। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। কাউন্সিলরদের দলীয় ট্যাগ না থাকায় সাঁতার কাটা সোজা। সেখানে বিএনপি প্রার্থীর অভাব হবে না। বিনা বাধায় নির্বাচনে জয় সম্ভব নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য হবে, ইসি টেস্ট কেসে উতরে যাবে।

প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট। এর পর ১২ জুন খুলনা ও বরিশালে এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

সুত্রঃ ভোরের কাগজ