পর্যটনের জন্য ফের উন্মুক্ত হচ্ছে পাহাড়

শেরপুর নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশের এক-দশমাংশ জুড়ে বিস্তৃত রূপময় ভূখণ্ড তিন পার্বত্য জেলা-রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। বিস্তৃত সংরক্ষিত বনাঞ্চল, উপত্যকা, নদী, পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ঢেউ খেলানো সৌন্দর্য, পাহাড়ি ঝরনা-ঝিরি দেশ-বিদেশের অনেক আকর্ষণীয় স্থানকেও হার মানাতে পারে। পার্বত্য জেলার চারদিক ঢেউতোলা সবুজের উঁচু পাহাড়ের দেওয়াল। মাঝেমধ্যে ব্যস্ত ছোট ছোট শহর ও শহরের প্রবেশ পথের দুই পাশে সবুজের বাঁকে-বাঁকে উঁচু-নিচু সর্পিল রাস্তা। অনেক পর্যটকই পার্বত্য শহরকে ছবিতে দেখা নেপালের কাঠমান্ডু শহরের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। অনেকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিও বলে থাকেন।

সময়ের ব্যবধানে আলুটিলার রহস্যময় সুরঙ্গ, রিছাং ঝরনা, তৈদুছড়া ঝরনা, হর্টিকালচার সেন্টারসহ খাগড়াছড়ির অরণ্যঘেরা সবুজ প্রকৃতির টানে পর্যটকরা ছুটছেন পাহাড়ের পথে। মাত্র পাঁচ-সাত বছরের ব্যবধানে বদলে গেছে পার্বত্য অঞ্চলের পর্যটন শিল্প। সময়ের ব্যবধানে সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে এ শিল্প। প্রায় এক মাসের নিষেধাজ্ঞায় অনেকটাই থমকে গেছে এই তিন পার্বত্য অঞ্চলের অর্থনীতি। নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বিপাকে পড়ে এ খাতে সংশ্লিষ্ট হাজারো মানুষ। সাজেক রিসোর্ট মালিক সমিতির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক রাহুল চাকমা জন জানান, এ মৌসুমে সহিংসতার ঘটনা না ঘটলে তারা ব্যবসা করতে পারতেন ৯ থেকে ১০ কোটি টাকা এবং লাভবান হতে পারতেন ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাজেক পরিবহন মালিক সমিতির এক নেতা জানান, খাগড়াছড়ি থেকে প্রতিদিন সাজেকে তাদের ৫০ থেকে ৬০টি চান্দের গাড়ি (জিপ গাড়ি) পর্যটকদের নিয়ে যাতায়াত করে। প্রতি শুক্রবার ১৫০ থেকে ১৬০টি গাড়ি এবং শনিবার ৮০ থেকে ১০০টি গাড়ি সাজেক-খাগড়াছড়ি যাতায়াত করে থাকে।

তিনি জানান, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে কোনো পর্যটক না আসায় পরিবহন ব্যবসায়ীরা ৫ কোটি থেকে ৬ কোটি টাকার ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তারা। এ মৌসুমে ব্যবসা করতে পারলে তাদের দেড় থেকে ২ কোটি টাকা আয় আসত। পরিবহন বন্ধ থাকায় তাদের ১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।

পরিবহন মালিক সমিতির এ নেতা আরও জানান, পর্যটকদের ওপর ভিত্তি করে তাদের পরিবহন ব্যবসা দাঁড়িয়েছে। এ পরিবহন খাতে এখানে কয়েক শ শ্রমিক জড়িত। ব্যবসা না হওয়ায় তারাও অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এইজন্য সাজেকে পর্যটকদের নিয়মিত যাতায়াতে নিরাপত্তা জোরদার করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

তাই পুনরায় পর্যটন চালু হওয়ার সিদ্ধান্তে স্বস্তি ফিরেছে তাদের মনে। পর্যটন-সংশ্লিষ্টদের আশা, আসছে পর্যটন মৌসুমে তারা এই ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারবে। এর আগে, পাহাড়ি-বাঙালি সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। গত ৭ অক্টোবর বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকরা যুগপত্ভাবে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এই তিন জেলায় ‘পর্যটক ভ্রমণ নিরুত্সাহিত’ করেন। ফলে দীর্ঘ এক মাসে পার্বত্য এলাকা পর্যটক শূন্য হয়ে পড়ে। এতে কেবল সাজেক কটেজ এবং পরিবহন মালিকদের ক্ষতি গুনতে হয়েছে কয়েক কোটি টাকার অধিক। তবে সুখবর দিলেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।

তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকার পর আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পর্যটন স্পটগুলো ভ্রমণপিপাসুদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। গতকাল বুধবার সকালে জেলা প্রশাসনের সভা কক্ষে আয়োজিত বান্দরবান পর্যটনসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় ১ নভেম্বর থেকে রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের ভ্রমণের ওপর সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান।

তিনি জানান, ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকরা নির্দ্বিধায় রাঙ্গামাটি ভ্রমণ করতে পারবেন। আর পর্যটকদের ভ্রমণে যাতে কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয় তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। গতকাল রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের আগমনের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা জানান তিনি।