আদানিকে আরো ১৭ কোটি ডলার পরিশোধ করল বাংলাদেশ

শেরপুর নিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশ সরকার ভারতের আদানি পাওয়ারকে আরো ১৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার (২ হাজার কোটি টাকার বেশি) বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে। ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অবস্থিত গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এই অর্থ দেয়া হয়। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস এ তথ্য জানিয়েছে।

গত মাসে ৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার পরিশোধ করার পর, চলতি মাসে আরো ১৭ কোটি ডলার পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ একটি ঋণপত্র (এলসি) খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঋণপত্রের পরিমাণ ১৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা প্রায় ২ হাজার ৬১ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আদানি পাওয়ারকে পরিশোধ করবে।

এলসি খোলার বিষয়টি এক অজ্ঞাত সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, পিডিবি এই অর্থ আদানি পাওয়ারকে পরিশোধ করতে ভারতের আইসিআইসিআই ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে একটি তৃতীয় এলসি খোলার ব্যবস্থা করেছে।

চুক্তি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ : ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সরকার আদানি পাওয়ারের সঙ্গে ২৫ বছরের জন্য একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ আনা হচ্ছে। গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্টের দুটি ইউনিটে উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ৮০০ মেগাওয়াট করে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশে মোট ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রফতানি করা হয়। এই বিদ্যুৎ সরবরাহ বাংলাদেশে বিদ্যুতের মোট চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করে থাকে।

তবে সম্প্রতি এই বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর আগে কয়লার দাম নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। বাংলাদেশ সরকার ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কয়লার উচ্চ দাম মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানালে আদানি পাওয়ার দাম কমাতে রাজি হয় এবং পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় কম দামে কয়লা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে, এক বছর পর আবারও কয়লার দাম বৃদ্ধি করে আদানি, যা বর্তমান বিলের একটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

বকেয়া বিলের চাপ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে সংকট : পূর্বে আদানি পাওয়ারের বকেয়া বিল পরিশোধে বাংলাদেশকে চাপ দেয়া হয়েছিল এবং ৩১ অক্টোবরের মধ্যে তা পরিশোধের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। এরপর আদানি পাওয়ার ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেয়, তবে একই সঙ্গে তারা এই পরিশোধে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়।

বকেয়া বিলের পরিমাণ নিয়ে কিছু পার্থক্য রয়েছে। আদানি পাওয়ারের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে মোট পাওনা ৮৫ কোটি (৮৫০ মিলিয়ন) ডলার বা ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। তবে, পিডিবির দাবি, আদানির বকেয়া বিলের পরিমাণ ৭০ কোটি ডলার বা ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

উল্লেখযোগ্য, এই বকেয়া বিলের বড় অংশই বর্তমান সরকারের দায়িত্বে না থাকলেও শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে জমা হয়েছে। আগের সরকার প্রায় ৮০ কোটি ডলার বকেয়া রেখে গিয়েছিল, যার কারণে বর্তমান সরকারের জন্য এই বিষয়টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া, কয়লার দাম বৃদ্ধি ও বকেয়া বিলের ওপর ১৫ শতাংশ হারে সুদ যোগ করায় আদানি পাওয়ারের দাবি আরো বেশি হয়ে উঠেছে। এর ফলে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে, যা দেশের বিদ্যুৎ খাতের জন্য একটি বড় সংকটের সূচনা হতে পারে।